স্বদেশ রিপোর্ট ॥ ৪১ দিন অতিবাহিত হলেও নিউইয়র্কে বাংলাদেশী শাহেদ উদ্দিনের ঘাতকেরা গ্রেফতার হয়নি। ব্রুকলীনে একটি পুলিশ স্টেশনের দু’শ গজের মধ্যে বেআইনীভাবে পরিচালিত ক্যাসিনো কাম নাইট ক্লাবে বন্দুকধারির গুলিতে ৪ জন নিহত হবার ৪০ ঘন্টার মধ্যেও (১৩ অক্টোবর সন্ধ্যা) পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ৫ অক্টোবর নিউইয়র্ক সিটির চায়না টাউন রেল স্টেশনে গৃহহারা ৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
১২ অক্টোবর রাতে শিকাগোতে একটি বাসায় নৈশভোজ গ্রহণরত ৪ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের ৯ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ৪ জনকে হত্যা এবং ১৭ জনকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এর একটি নিয়েও কোন মন্তব্য/মতামত ব্যক্ত করেনি জাতিসংঘ। এ অবস্থায় বাংলাদেশে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যাকান্ড নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। এ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ অক্টোবর রোববার অপরাহ্নে জাতিসংঘ মহাসচিবের মন্তব্য/মতামত/বিবৃতি চাইলে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক এনআরবি নিউজকে লিখিতাকারে বলেছেন, ‘নিউইয়র্কের কোন ইস্যুতে কিছু জানতে চাইলে বা মতামত নিতে হলে অনুগ্রহপূর্বক নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করুন।’
এরপর ফারহানকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় যে, নিউইয়র্ক সিটির ঘটনার জন্যে যদি সিটি প্রশাসনের মন্তব্য/মতামত নিতে হবে, তাহলে ঢাকার ছাত্রহত্যার পরিপেক্ষিতে জাতিসংঘের কর্মকর্তার মাথাব্যথা হলো কেন? এছাড়া, আহরার হত্যার জন্যে অভিযুক্ত ১৯ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ন্যূনতম গড়িমসির ঘটনা ঘটেছে বলে কেউই মনে করছেন না। এতদসত্বেও জাতিসংঘ বিবৃতি দিতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের উপরোক্ত ঘটনাসহ মানবতা বিপন্ন করার মত কোন ঘটনারইতো প্রতিক্রিয়া/বিবৃতি জাতিসংঘ দিচ্ছে না। এরপর আর কোন জবাব পাওয়া যায়নি এ রিপোর্ট লেখা (রোববার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ) পর্যন্ত।
জাতিসংঘের এমন আচরণকে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী। নিউজার্সির কাউন্সিলম্যান এবং মুক্তিযোদ্ধা-বিজ্ঞানী ড. নূরন্নবী বলেন, ‘বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের সবকিছু নিয়েই জাতিসংঘ সরব হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের ব্যাপারেও জাতিসংঘের সরব হওয়া উচিত। তাহলেই এই বিশ্বসংস্থার প্রতি গোটাবিশ্বের আস্থা সুসংহত হবে। এটাই জাতিসংঘ সনদের মূলকথা।’
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. খন্দকার মনসুর এবং সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া জাতিসংঘের আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা হরদম ঘটছে। অভিবাসীদের গড়া যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রতিনিয়ত অভিবাসীরা নিগৃহিত হচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপে। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। নির্বাচিত কংগ্রেসম্যানরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ একটি বাক্যও প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি জাতিসংঘ থেকে।’
যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ এবং সেক্রেটারি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি বলেছেন, ‘দ্বৈতনীতি পরিহার না করলে জাতিসংঘের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য। বুয়েট ছাত্র আহরার হত্যার তথ্য প্রকাশের পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী প্রশাসন সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ছাত্রলীগের জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাহলে বাক স্বাধীনতা হরনের যে অভিযোগ জাতিসংঘ করলো, সেটির যৌক্তিকতা কোথায়?’
‘এমন আচরণের জন্যে জাতিসংঘকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় জাতিসংঘের সামনে বৃহৎ কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হবো’-বলেছেন জাকারিয়া চৌধুরী এবং আব্দুল কাদের মিয়া। ‘কারণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশে অনেক অগ্রগতিসাধিত হয়েছে। বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতাও অবাধ। দুয়েকজন পথভ্রান্ত লোকের কারণে গোটাদেশের ওপর অপবাদ চাপিয়ে দেয়ার মধ্যে কোন ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেনি’-মন্তব্য জাকারিয়া ও কাদেরের। সহজ-সরল প্রবাসীরা বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে তলব করার সংবাদে।